নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৮নং চরএলাহী ইউনিয়নের চরলেংটা ঘাট দখল করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ইব্রাহিম তোতা ও তার পরিবারে সদস্যরা। এ দখলবাজির মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজিও করা হচ্ছে। এ কাজটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই করা হচ্ছে বলে ইব্রাহিম তোতা প্রকাশ্যে বলে বেড়ান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আগ পর্যন্ত ঘাটটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর পাল্টে যায় দৃশ্য পট। ঘাটটি দখলে নেন বিএনপি নেতা ও চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন তোতা। এ নিয়ে রাজ্জাক-তোতার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেই দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করলে তা প্রতিহিংসায় রূপ নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একই মাসের ২৭ তারিখ আব্দুল মতিন তোতার উপর হামলা করা হয়। এতে গুরুতর আহত হন আব্দুল মতিন তোতা। পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ আগস্ট মারা যান তিনি।
আবু নাছের নামে এক ব্যক্তি ছাত্রদল নেতা এস্কান্দার ও তার পরিবারের মালিকানাধীন একটি স্পিড বোট পরিচালান করতেন। ফলে এ ঘাটে কি হয় না হয় তা তিনি ভালো করেই জানেন। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ঘাটে ৩টি স্পিড বোট আছে। যার দুটিরই মালিক আব্দুল মতিন তোতার বড় ছেলে ইব্রাহিম তোতা ও ছোট ছেলে বাহাদুর। আরেকটির মালিক ছাত্রদল নেতা এস্কান্দার।
এছাড়া ঘাটটিতে রয়েছে আরও ৬টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। যার একটির মালিক উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক নুরুল আলম শিকদার, দুটির মালিক তোতা চেয়ারম্যানের দুই ছেলে সবুজ ও ইসমাইল। একটির মালিক যুবদল নেতা হারুন, একটির মালিক বসুরহাটের বিএনপি নেতা হুমায়ুন অন্যটির মালিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের চার নেতা।
আবু নাছের বলেন, ”ঘাটে চলাচলকারী স্পিড বোটের আয়করা টাকা থেকে ইব্রাহিম তোতাকে দিতে হয় শতকরা ২০ভাগ। আর ট্রলার মালিকরা দিতে হয় শতকরা ৬০ ভাগ। তার মতে প্রতিদিন একটি স্পিড বোট গড়ে ৩০ হাজার টাকা এবং একইভাবে একটি ট্রলারও ৩০ হাজার টাকা আয় করে। আর এ টাকা থেকেই চাঁদা নেয় ইব্রাহিম তোতা ও তার বাহিনী।
আবু নাছের বলেন, ”চাঁদাবাজির এ টাকা থেকে মাসিক দেড় লাখ টাকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয় বলে তাদেরকে জানিয়েছেন ইব্রাহিম তোতা “
ইব্রাহিম তোতার হয়ে ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা আদায়ের কাজটি করেন সেলিম, রুবেল ও শেখ ফরিদ নামে তিন যুবক।
চাঁদা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঘাটে নিয়োজিত কেরানী রুবেল বলেন, “আমরা দৈনিক মুজুরীতে চাকরি করি। ঘাট থেকে যা আয় হয় তা থেকে খরচ বাদে অবশিষ্ট টাকা ইব্রাহিম তোতা, ইসমাইল ও বিএনপি নেতা মাষ্টারকে দিয়ে দিই। তারা টাকা নিয়ে কাকে দেন সেটি বলতে পারবোনা।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইব্রাহিম তোতার মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ভাই ইসমাইলের সঙ্গে কথা বললে তিনি ঘাট থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এখান থেকে যে টাকা আয় হয় তা থেকে টাকা আদায়কারী ৩জনের বেতন, মসজিদ-মক্তব্যে অনুদান ও এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৭জন নৈশ প্রহরীকে বেতন দেওয়া হয়।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এ কাজটি করা হচ্ছে বলে ইব্রাহিম তোতার বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর শামীম ফরহাদ বলেন তাদের এ বক্তব্য সঠিক নয়। তাদের দলীয় দ্বন্দ্বের কারনে এমন হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ ঘাট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত নাই।
চলমান সময়/২০আগস্ট/পিএস