আচার্য ও দেশের রাষ্ট্রপতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় টাকা রোজগার আর ‘ইগো’ সমস্যায় সায় দিচ্ছেন না উপাচার্যরা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে সাফ বলে দিয়েছেন ভর্তি নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে চিন্তা করা গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে সরকারের কথা না শোনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এবারের প্রথমবর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন। পুরনো ও বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। করোনার মহামারি চলাকালীন সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনায়ও পড়েছেন তারা।
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন। এতে শতভাগ সততা বা স্বচ্ছতা বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়েও তারা সন্দিহান। আবার একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটিমাত্র ভর্তি পরীক্ষা (গুচ্ছ পদ্ধতি) নেওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায় সে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী মঙ্গলবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৈঠকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে হবে, নাকি সরাসরি হবে- তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ইউজিসি থেকে জানা গেছে।
জানা গেছে, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। তবে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ বছর পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা তা মঙ্গলবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কিনা তার সক্ষমতা যাচাই করতে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। কমিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের পাঁচজন অধ্যাপক রয়েছেন যাদের মধ্যে দু’জন যুক্তরাষ্ট্র, একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এবং অপরজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।
জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, বুয়েট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে এবং সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়েছে। বড় আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতেও সরকারের চাওয়া অনুসারে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা এ বছরও হোঁচট খেতে যাচ্ছে।
দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে তারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বরাবরই একমত হয়েছেন। বুয়েট, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রামসহ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে না এসে সরাসরি এবং এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়, তাহলে আমরা কেন নেব না?
আর অভিভাবকরা বলেছেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে নিলেওতো পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীর সমাগম ক্যাম্পাসে ঘটবে। যার কারণে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি পরীক্ষা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে ইউনিট ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি এভাবে পরীক্ষা নেয়, তাহলে পুরো ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। সবাই যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসে তাহলে সাধারণ, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি আলাদা করে তিনটি গুচ্ছ পরীক্ষা নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
গুচ্ছ পরীক্ষা নেওয়া হলে তা কি অনলাইনে নাকি সরাসরি হবে- জানতে চাইলে ড. মীজান বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এতে কমপক্ষে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটবে, যা পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় এখনও গুচ্ছ পদ্ধতির বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
Leave a Reply