ছোটবেলা থেকেই অস্থির ডানপিটে প্রকৃতির ছিলাম, বাড়ির ঠিক সামনে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উন্মত্ত পদ্মার খরস্রোতা শাখা, কুমার নদী। এখন যেটা মৃতপ্রায় খাল সদৃশ, একদা সেথা বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, স্পিডবোট চলতে দেখেছি। স্টিমারের হুইসেল বা স্পিডবোটের আওয়াজ শুনলেই দৌড়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতাম, মুহুর্মুহু ঢেউ এসে পায়ে বাড়ি খেতো।
একটু হাঁটাচলা শিখতেই আম্মু তাই সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতো, কখন নদীতে ডুবে যাই! আব্বু-আম্মুর প্রচেষ্টা আর পানির প্রতি আমার তীব্র আকর্ষণের কারণে আশেপাশের সমবয়সী অন্য সবার আগে, প্রায় চার বছর বয়সেই সাঁতার শিখতে পেরেছি।
সাঁতার শেখাতে আম্মু দারুণ একটা কৌশল শেখালেন, দুটি শুকনো নারকেল থেকে কিছুটা আঁশ বের করে, সেটা দঁড়ির মতো পেঁচিয়ে শক্ত করে গিট দিয়ে দিলেন। সেই জোড়া নারকেলের গিট, পেট বরাবর প্লেস করলে দুই নারকেল দুই দিকে ভেসে থাকতো, আর আমি পানিতে ভেসে হাত-পা নেড়ে সাঁতার কাটতাম। এভাবে দিন সাতেক প্রাকটিসের পর একদিন সাহস করে ঐ শুকনা নারিকেলের ভরসাতেই নদীর একটু গভীরে চলে গেলাম। হঠাৎ পাশ দিয়ে সাই করে একটা স্পিডবোট গেলো, প্রচন্ড ঢেউয়ে জোড়া নারিকেলের গিট খুলে স্রোতে ভেসে গেলো, আর আমি ভরপেট পানি খেয়ে, হাত-পা চালিয়ে কোন রকম জান বাঁচিয়ে তীরে পৌঁছালাম। এরপর থেকে আর নারকেল বা অন্যকিছু প্রয়োজন হয়নি। প্রতিদিন গড়ে ২-৩ ঘন্টা নদীতে, এপার-ওপার আসা-যাওয়া, কিনার ঘেসে গামছা দিয়ে মাছ ধরা, ব্রিজ থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়া, বন্ধুদের সাথে কাঁদা ছোড়াছুড়ি, ডুব দিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, সারাগায়ে কাঁদা মেখে গড়াগড়ি এমন কতশত সুখস্মৃতি! ♥
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, বছরে প্রায় দশ হাজার, যাদের বেশিরভাগ ১-৪/৫/৬ বছর বয়সী। বাড়ির অদূরের খাল, পুকুর, ডোবা বা নদীতেই অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটে।
নদীমাতৃক এই দেশে আপনার সন্তান খেলাচ্ছলে কিংবা ঘুরতে গিয়ে কৌতুহল, অসাবধানতা বা দুর্ঘটনাবশত পানির সংস্পর্শে যেতেই পারে। তাই শহর বা গ্রাম যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার সন্তানকে অবশ্যই সাঁতার শেখাবেন। এক্ষেত্রে মোটেও গড়িমসি করবেন নাহ, নইলে বিদ্যেবোঝাই বাবু মশাই এর মতো, জীবনের ষোল আনাই মিছে মনে হবার পরিস্থিতি আপনার জীবনেও আসতে পারে!
Leave a Reply