বিভ্রান্তি, অচলাবস্থা, গ্রাহক হয়রানি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহায়তা এবং দিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। শহিদুল ইসলাম বীমা সেক্টরে একজন সৎ দক্ষ ও বীমাবিদ হিসেবে বেশ পরিচিত। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ এই পদে যোগদান করার পূর্বে তিনি বেসরকারি খাতের আরও কয়েকটি বীমা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের শীর্ষ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এর আগে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নেপথ্যে কি রয়েছে তা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করা হলো দৈনিক চলমান সময়ে।
চলমান সময় : প্রথমত ফারইষ্ট লাইফের ইন্স্যুরেন্স এর দায়িত্ব নিয়ে কি কি সুবিধা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন?
মো. শহিদুল ইসলাম : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী জীবন ও বীমা প্রতিষ্ঠান ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক পরিচালনা পর্যদের কারো কারো অর্থপাচার, লুটপাট, তহবিল তছরুপ ইত্যাদিসহ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। দীর্ঘদিনের সম্মানিত গ্রাহক, কর্মী ও স্টাফদের শ্রম ও অবদানে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি আজ অপপ্রচারে, বিভ্রান্ত। অথচ, ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ আজও বাংলাদেশে ইসলামী জীবন বীমার প্রতিকৃতি হিসেবে দীপ্তিময় হয়ে আছে।
সময়ের অর্থনীতি: ফারইষ্ট লাইফের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আপনার প্রাথমিক পদক্ষেণ গুলি কি কি?
মো. শহিদুল ইসলাম: এই সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে আমি কিছু প্রয়োজনীয় এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। দেশের প্রতিটি থানা, উপজেলা, জেলা ও বিভাগের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে তুলে ধরেছি এবং প্রয়োজনে সরাসরি সাক্ষাৎ করে বাস্তব চিত্র সঠিক তথ্য উপস্থাপনের ঘোষণা যথা দিয়েছি।
সময়ের অর্থনীতি: কোম্পানির বর্তমান অবস্থা কি?
মো. শহিদুল ইসলাম: আমরাবিভ্রান্তি, যড়যন্ত্র ও মিডিয়া অপপ্রচারের শিকার। গত এক বছর ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে তাঁরা সাধারণ বীমা গ্রাহকদের মধ্যে ভয়ভীতি ও অনাস্থা তৈরির চেষ্টা করছে। মিডিয়ার অপব্যাখ্যা এবং অতিরঞ্জিত প্রতিবেদনগুলোর কারণে বীমা খাতের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন বিয়েধমূলক পক্ষ ফারইষ্ট ইসলামী লাইফকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। ফলস্বরূপ, কোম্পানির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং বীমা কর্মীদের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে লাখ লাখ বীমা গ্রাহকের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার এবং তাদের পাওনা অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করতে আমি ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হাল ধরেছি। নিজ উদ্যোগে গ্রাহকদের লুটপাটকৃত টাকা দাবি পরিশোধে অংশ হিসেবে ফারইয় টাওয়ার থেকে প্রেস-ক্লাব পর্যন্ত ব্যানারসহ মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছি। তবুও, জনস্বার্থে দুঢ় মনোবল নিয়ে সৎ অবস্থান বজায় রেখে এবং গ্রাহকদের পুঞ্জিভুত টাকা আত্মাসাৎকারীদের নিকট থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি।
সময়ের অর্থনীতি: দাবি পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও বর্তমান অবস্থানে অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত জনবল নিয়ে আপনার পদক্ষেপসহ ফারইষ্ট লাইফের ইন্স্যুরেন্সকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আপনার পরিকল্পনা বলুন।
মো. শহিদুল ইসলাম: লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লাখ লাখ বীমা গ্রামতের হাতানো আস্থা পুনরুদ্ধার এবং তাদের পাওনা অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করতে তড়িত গতিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দাবি পরিশোধ ছাড়াও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর গ্রাহকদের পাওনা অর্থ দ্রুত উদ্ধারের জন্য আন্তরিক সহযোগিতা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্রমারফত এবং স্বশরীরে জোরালো ভাবে আহবান জানিয়েছি।
সময়ের অর্থনীতি: ফারইষ্ট লাইফের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানা জেলা গুলোতে মামলা এবং বিভিন্ন অভিযোগ করা হচ্ছে এর প্রেক্ষিতে আপনার পদক্ষেপ গুলি কি কি?
মো. শহিদুল ইসলাম: আমি প্রতিষ্ঠানটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও বিভাগীয় কমিশনারদের নিকট চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের প্রকৃত অবস্থা, চলমান মামলা-মোকাদ্দমার বিবরণ, গ্রাহকদের অধিকার ও কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুনিদিষ্টভাবে তুলে ধরেছি।
সময়ের অর্থনীতি: ফারইস্টের বর্তমান পরিচালনা পর্যদ কোম্পানির উন্নয়ন এবং পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কি কি পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বা করতে যাচ্ছেন।
মো. শহিদুল ইসলাম।: ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পরিচালনা পর্যদের সহযোগিতায় প্রাথমিক এবং জরুরি ভূমিকা ও অঙ্গীকার নিয়ে গ্রাহক আস্থা অর্জনের জন্য ৬ মাসে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কর্মীদের ইনসেনটিভ ঘোষণার মাধ্যমে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা অর্জন এবং প্রায় ২০০ কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করি। আর এজন্য ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদসহ আমার মাঠ পর্যায়ে ত্যাগী এবং কোম্পানির জন্য নিবেদিত সকল কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই আশা রাখি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে স্বল্প সময়েই ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ পুর্বাবস্থায় ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
সময়ের অর্থনীতি: ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে আপনি সিইও হিসেবে যোগদান করতে গিয়েও যোগদান করতে পারেননি, কেন যোগদান করতে পারেন নাই?
মো. শহিদুল ইসলাম: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে আমার নিয়োগ প্রস্তাব অজ্ঞাত কারনে অনুমোদন না করায় এবং আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল বারীর অসহযোগিতায় নিয়ম বহিঃর্ভূতবাবে অন্য একজনকে অনুমোদন করায় আমার আর ডেন্টা লাইফে যোগদান করার সুযোগ হয়নি।
সময়ের অর্থনীতি: সময়ের অর্থনীতি পত্রিকা সম্পর্কে আপনার মতামত বলুন সময়ের অর্থনীতি পত্রিকাটি দেশের ব্যাংক, বীমা, শিল্প বিষয়কসহ তথ্যবহুল অর্থনীতি, দেশ জাতি ও সমাজ উন্নয়নের পটভূমির উপর নির্ভরশীল সু-পরিছন্ন একটি পত্রিকা। সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সমৃদ্ধ একটি জ্ঞানের ভান্ডার হিসাবেও ভাল ভূমিকা রাখার এবং পড়ার মানসম্মত একটি পত্রিকা। শিক্ষিত ও সুশীল সমাজের নিকট পত্রিকাটির অত্যদিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং তাবখাতেও রাখবে বলে আশা করি। সময়ের অর্থনীতি। সময়ের অর্থনীতি আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই
মো. শহিদুল ইসলাম: আপনাকে এবং সময়ের অর্থনীতি পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
চলমান সময়/১৪ আগস্ট/পিএস



