ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নামে জমি ক্রয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বংশাল থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।
এরপর তাকে সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই কোম্পানির সম্পদ ক্রয়ের নামে নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেকের নেতৃত্বে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাত হয়। দুদকের স্বপ্রণোদিত তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তারা ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক তাসলিমা ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্লাহ, এম এ খালেক ও তার স্ত্রী সাবিহা খালেক ও তাদের মেয়ে সারওয়াৎ খালেদ সিমিন, সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ, মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মো. আজহার খান ও ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. সোহেল খানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ৩৩.৫৬ শতাংশ জমিসহ একটি ভবন ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয়ের নামে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
যেভাবে জমি ক্রয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে
২০১৪ সালের ১৬ মার্চ ফারইস্টের সাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্লাহ গ্রহীতা হিসেবে এবং জমির মালিক মো. আজহার খান ও মো. সোহেল খান বিক্রেতা হিসেবে ঢাকা জেলার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিষ্ট্রি করেন (দলিল নং-১৮৮১ )। জমির মূল্য হিসেবে দাতাদেরকে ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। মো. আজহার খান ও মো. সোহেল খানের নিকট থেকে জমি ক্রয় করা হলেও তাদের লিখিত আবেদন ব্যতিত জমি বিক্রয়ের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে। কিন্তু গ্রহীতাকে টাকা না দিয়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে জমির মূল্য পরিশোধ করতে হবে মর্মে ফারইস্টের পরিচালনা পর্ষদেরও কোনো লিখিত অনুমোদন ছিলনা। তারা জমির মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলেন পে অর্ডার ও একাউন্ট পেয়ী চেক। যাতে স্বাক্ষর করেন সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহ ও কোম্পানি সচিব সৈয়দ আব্দুল আজিজ।
যেভাবে টাকা লেনদেন করে নজরুল চক্র
মামলার আসামি ও জমি দাতা মো. আজহার খান জমি রেজিষ্ট্রির তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখায় তার হিসাব নম্বর ০০২১০১০০০০০০৪৭ থেকে চেক নং-অডঈঅ ০০৪৪২৩২ এর মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডকে ২০ কোটি টাকা প্রদান করেন। এ চেক কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রদান না করে শুধু সাউথইস্ট ব্যাংক লি. এর নামে ইস্যু করা হয়। এ চেক সাউথইস্ট ব্যাংক লি. ঢাকার কামরাঙ্গির চর শাখায় জমা দেয়া হলে ব্যাংকের এই শাখা তিন দিন পর ১৯ মার্চ সানড্রি ক্রেডিটর হিসাব নম্বরে জমা দেয়। পরবর্তীতে ব্যাংকের কামরাঙ্গি চর শাখার ম্যানেজার এস এম মোর্শেদের নির্দেশে সানড্রি ক্রেডিটর হিসাব থেকে তিন মাস মেয়াদী ৬টি এফডিআর হিসাব খোলা হয়। এখানেও গ্রাহকের একাউন্ট ওপেনিং ফরমগুলো সঠিকভাবে পূরণ করা হয়নি। শুধু গ্রাহকের এনআইডির ফটোকপি সংযোজন করা হয়েছে। উপরোক্ত একাউন্ট সমূহ খোলেন সাউথইস্ট ব্যাংক লি. কামরাঙ্গির চর শাখার সাবেক ম্যানেজার এস এম মোর্শেদ ও সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার গোলাম কিবরিয়া।
পরবর্তীতে গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে ঠিকানা যাচাই ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এনআইডি যাচাই করে দেখা যায়, যে ৬ জনের নামে এফডিআর হিসাব খোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। অথচ তদন্তে দেখা গেছে ওই সকল হিসাব নম্বরের তিনটি থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি হিসেবে ১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লি. এর সাবেক পরিচালক এম এ খালেক। বাকি তিনটি এফডিআর একাউন্ট থেকে ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা ইসলাম ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা তুলে নেন।
নজরুল-খালেক চক্রের দুর্নীতি এখানেই শেষ হয়নি, তারা ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ ইউনিয়ন ব্যাংক লি. গুলশান শাখায় মো. আজহার খানের মালিকানাধীন মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর ০০২১০১০০০০০৪৭ নং একাউন্ট থেকে এম এ খালেক পে অর্ডারের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা, এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেককে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, এম এ খালেকের কন্যা সারওয়াৎ খালেদ সিমিনকে ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, মো. নজরুল ইসলামকে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ও নজরুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা ইসলামকে ৬ কোটি ৩০ লাখসহ সর্বামোট ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
উল্লেখ্য, জমি ক্রয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা ৪৫ কোটি টাকার মধ্যে নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নিয়েছেন ১৯ কোটি ৫০ লাখ এবং এম এ খালেক, তার স্ত্রী সাবিহা খালেক ও কন্যা সারওয়াত খালেদ সিমিন নিয়েছেন ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
চলমান সময়/২৫ অক্টেোবর/পিএস



