দেশের জীবন বীমা খাতে এক সময়ের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড দীর্ঘ অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্ধকার অধ্যায় পেরিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টের নেতৃত্বে কোম্পানিটি এখন গ্রাহকের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট। একই সঙ্গে বীমা দাবি পরিশোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রায় ২৭০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) সেই সময়ের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন স্বাধীন বোর্ড নিয়োগ করে। দুই বছর পর ২০২৩ সালে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে।
এরপর কোম্পানির পক্ষ থেকেও আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেয়া নতুন চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে বর্তমান ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কার্যকর আর্থিক নিরীক্ষা, ব্যয় সংকোচন ও দাবি পরিশোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন।
বীমা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দাবি পরিশোধ অব্যাহত থাকায় প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করছে।
নতুন ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি অভ্যন্তরীণ অডিট ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার, সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন ও দায় নিয়ন্ত্রণ, শরিয়াহ বোর্ড সক্রিয়করণ, ডিজিটাল বীমা দাবির প্রক্রিয়া প্রবর্তন, গ্রাহক সহায়তা হটলাইন ও মোবাইল সেবা চালুসহ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করে শক্ত ভিত তৈরিতে সক্ষম হচ্ছে।
আইডিআরএ-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশের জীবন ও সাধারণ বীমা খাতে এখনো প্রায় ৭ হাজার ১০ কোটি টাকার দাবি বকেয়া, যা সামগ্রিক খাতে আস্থার সংকট সৃষ্টি করছে। তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পুনর্গঠিত ব্যবস্থাপনা ও দাবি পরিশোধের অগ্রগতি বাজারে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছি। এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকের পবিত্র আমানত সুরক্ষিত রাখা ও দ্রুত পরিশোধ নিশ্চিত করা। ফারইস্ট আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি মূলক প্রতিষ্ঠান।”
একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে ফারইস্টকে দুর্বল কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। কারন এ কোম্পানির এখনো প্রচুর স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
চলমান সময়/৫ জুলাই/ পিএস