20.5 C
New York
Sunday, July 6, 2025
spot_img

যুদ্ধ বিরতির পর প্রথমবার জনসমক্ষে এলেন খামেনি

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। দীর্ঘদিন পর তাঁকে জনসম্মুখে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে তাঁর সমর্থকেরা। খামেনির এই উপস্থিতি এমন সময় এলো, যখন ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

৮৫ বছর বয়সী এই নেতা শনিবার তেহরানের ইমাম খোমেনি মসজিদে আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি উপস্থিত জনতার দিকে হাত নেড়ে ও মাথা নেড়ে সাড়া দিচ্ছেন। তাঁর প্রবেশে উপস্থিত জনতা দাঁড়িয়ে যায় এবং স্লোগান দিতে শুরু করে।

রাষ্ট্রীয় টিভির তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি ধারণ করা হয় তেহরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইমাম খোমেনি মসজিদে, যার নামকরণ করা হয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার নামে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর প্রথমবার জনসমক্ষে এলেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

১৩ জুন শুক্রবার শুরু হয় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সরাসরি সামরিক সংঘাত। ইসরায়েল কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন।

জবাবে ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে অন্তত ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। পুরো সংঘাতে ইরান স্বীকার করেছে যে তাদের ৯০০ জনের বেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন।

এই যুদ্ধ চলাকালে আয়াতুল্লাহ খামেনি জনসমক্ষে আসেননি। রাষ্ট্রীয় টিভিতে তাঁর তিনটি পূর্ব-রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার হয়, যা থেকে গুজব ছড়ায় যে তিনি হয়তো কোনো গোপন বাঙ্কারে অবস্থান করছেন বা শারীরিকভাবে অসুস্থ। শনিবারের সরাসরি উপস্থিতি সেই সব গুজবের অবসান ঘটায়।

২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নেয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “ওয়াশিংটন জানে খামেনি কোথায় আছেন, তবে এখনই তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেই।”

২৬ জুন একটি পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভাষণে খামেনি ট্রাম্পের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমরা আমেরিকার মুখে চপেটাঘাত করেছি”— কাতারে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলার কথা উল্লেখ করে।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আপনি একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং আপনার দেশে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। কিন্তু আপনাকে সত্য বলতে হবে—আপনারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ইরান জানিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে ইরান জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA-কে আর সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।

যুদ্ধকালীন IAEA-এর পরিদর্শকরা তেহরানেই অবস্থান করলেও ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান IAEA-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন স্বাক্ষর করেন। এর ফলে পর্যবেক্ষকরা ইরান ত্যাগ করেন।

IAEA মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি শুক্রবার বলেন, “ইরানের সঙ্গে আবারও সংলাপ শুরু করে এর পারমাণবিক কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ ও যাচাই কার্যক্রম চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ সংঘাত থামাতে রাজি হয়।

সংঘাত শুরুর আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিল। তবে এই সংঘাত সেই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বৃহস্পতিবার বলেন, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-তে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সরাসরি উপস্থিতি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ নয়, বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক বার্তা—ইরান এখনো দৃঢ় এবং নেতৃত্বে কোনো শূন্যতা নেই, এমনটি বোঝানোর একটি প্রয়াস। সাম্প্রতিক সংঘাত এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও দেশটির সর্বোচ্চ নেতার এই উপস্থিতি সমর্থকদের মনোবল বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলমান সময়/৬জুলাই/পিএস

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

যোগাযোগ রেখো

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

এ সম্পর্কিত খবর